আমার অনেকদিনের শখ আমি একটা নদী হব। সমতলের শান্ত চরপড়া নদীগুলোর মত নয়, বা পাহাড়ী ঝর্নার মত লাফিয়ে ছুটে আছড়ে পড়া নদীও নয়। ফল্গুর মত অন্তঃসলিলা নদী।
আমি মাটির তলায় বালিতে ঢাকা নদী – কেউ দেখতে পাবে না আর আমি মাটির তলা দিয়ে বয়ে যাবো। শুধুমাত্র তুমি জানবে আমার অস্তিত্ব। তীব্র দাবদাহে আকন্ঠ পিপাসা নিয়ে মাটির আস্তরন সরাবে তুমি, আমার একটু স্পর্শ পাবার জন্য আকুল হবে তুমি। ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ পাবার জন্য লম্বা নিঃশ্বাস নেবে আমার বুকের খাঁজে নাক ডুবিয়ে। তারপর ধীরে ধীরে মাটি সরাতে থাকবে তুমি, এক একটা আবরন উন্মোচন করার মত। মাটি সরিয়ে আমার একটু ছোঁয়া পাবে তুমি, ঠিক যেন একসাথে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পাওয়া সামান্য অসাবধানী স্পর্শ, যার মধ্যে জমে থাকে পুরোটা ছুঁতে না পারার আফসোস।
সেই আফশোষগুলো জমে জমে কালো মেঘ হয়ে ভেসে বেড়াবে বুকের আকাশে, আর একদিন হঠাৎ সব নিষেধ অমান্য করে ঝরে পড়বে …… যেমন সেদিন …… নাহ, থাক।
মাটি ভিজবে পিচ্ছিল হবে ক্রমে প্লাবিত হবে আর আমি বেঁচে উঠব নতুন করে, প্রথমে কুলকুল করে ছুটব শিশুর মত টলোমলো পায়ে, তুমি শক্ত করে আমার হাতটা ধরে থেকো। তারপর ঘোর বর্ষায় উদ্দাম বেহিসেবী হবো আমি, তোমায় জড়িয়ে ধরে আদরে ভিজিয়ে দেব আমি। আবেগে আমার ঠোঁট তিরতির করে কাঁপবে, দুচোখ বন্ধ করে মনের গভীরে আরো গভীরে তোমার মুখ দেখতে পাবো। তুমি অবাক হবে ভেবে একি সেই আপাত শুকনো নদীটা, যার থেকে একফোঁটা ভালোবাসা আহরণ করতে বালি খুঁড়ে খুঁড়ে গভীরে উঁকি দিতে হত।